এক লাখ টাকার ইলিশ ধরা হলেঃ জেলেরা পাবেন মাত্র ২ শতাংশ। দৈনিক প্রথম আলো ৯ অক্টোবর ২০২০) নব্বই দশকের শেষের দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এলাকায় বেশ ধুমধাম পড়ে গেছে, সিনেমার সুটিং হচ্ছে তাই। শমী কায়সার রিক্সায় উঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মফস্বল এলাকা কত লোক যে দেখতে এসেছে; সে এক মহোৎসব। ছবির নাম সনাতন গল্প। এলাকায় শুটিং করা ছবি দেখব না? তাই কী হয়? কত অপেক্ষায় যে ছিলাম! “বল্টু কেন সন্ত্রাসী” “ছেড়ে দে হারামজাদা” এ জাতীয় ছিঃনেমা হলে অনেক মাধ্যমে প্রচারের ঘাটতি থাকত না। কিন্তু দাদন ব্যবসায়ী মহাজনের গ্যঁড়াকলে পড়া জেলেদের জীবন নিয়ে তৈরী তাও আবার নাম “সনাতন গল্প” কেই বা খোঁজ রাখে! কিন্তু ২২ বছর পর সেই ভুলে যাওয়া সিনেমার খোঁজ পেয়ে আবারও সংবিৎ ফিরে এল। মাসুম আজীজ একজন গুণী অভিনেতা নির্মতা। ঘানি ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে কেঁদেই ফেলেছিলাম! প্রজন্মের পর প্রজন্ম মহাজন চক্রের অদৃশ্য সুতোয় জেলেদের বন্দিত্বের এক অসাধারণ চিত্র তিনি সনাতন গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন। “এক মুটো ফাইট” “আধা লিটার নৃত্য” আর “এক চিমটি প্রেম” অনেক বাংলা সিনেমার এই চিরন্তন রসায়ন এখানে অনুপস্থিত। একদম চোখের উপর ভেসে উঠেছে বাল্যকালে দেখা সেই জেলে পল্লি এবং তাদের সংগ্রাম। আমি পাবনার মানুষ। এই সিনেমাতে ব্যবহৃত পাবনার সংলাপগুলো আমার মুখ থেকে হারিয়ে যাওয়া ভাষাকে পুনরায় স্বরণ করে দিচ্ছিল। পাবনা জেলার ইতিহাস বইটিতে একটা তথ্য পড়েছিলাম “মা সন্তানকে সান্তনা দিচ্ছে, কাঁদিস না তোকে চালের ভাত খেতে দিব” ঠিক অনুরুপ একটি সংলাপ এখানেও পেলাম “মা মরা মেয়ে আমার ভাত খাওয়ানো শিখাবে না” সত্যই নিদারুন উপস্থপনা। তবে টগা নামের ছোট ছেলেটির অতি চিৎকার মাঝে মাঝে বিরক্ত লেগেছে। সনাতনের মেকআপটা ভালো লাগেনি। ছবিটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে অনলাইনে বেশ ঘাটাঘাটি করলাম। মাসুম আজীজের বক্তব্যও পড়লাম। যারা চলচিত্র বানান তারা গুণী লোক। সরকারী অনুদান নিয়ে ছবি তৈরী হলে অনুরোধ থাকবে নির্মাতারা যেন দ্রুত অর্থ ছাড় পান। ৯৬ সালে সুটিং করা দৃশ্য বাদ দিয়ে নতুন করে ছিনেমা বানালে ব্যায় অবশ্যই বাড়বে। কুশিলবরাও তো আর শিশু বা যুবক-যুবতী থাকবেনা ২২ বছর পর! ---- মাসুম আজীজ সিনেমাতে দেখিয়েছেন জেলেরা ধৃত মাছের চার ভাগের একভাগ পান। মাত্র দুইমাস আগে প্রথম আলো লিখেছে জেলেরা পায় মাত্র ২ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ ভাগের এক ভাগ। তাই বলছি সনাতন গল্প ফুরিয়ে যায় নি।