জাকির সেলিমঃ চলনবিলের পাবনা,সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প। এক সময় চলনবিলের প্রায় প্রতিটি বাড়ির আশে - পাশে বাঁশ বা বেতের ঝাড় ছিল গ্রাম বাংলার চিরাচরিত রূপ। সে রুপে এখন ভাটা পড়েছে। মানুষের রুচি পরিবর্তিত হয়ে আধুনিকতায় রুপ নিয়েছে। মানুষ এখন ছুটে চলেছে নিত্য নতুন আবিষ্কৃত বাতিলের দিকে। এক সময় এ দেশেই বিস্তীর্ণ জনপদে বাশ-বেত দিয়ে তৈরি হত হাজারো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। ঘরের পিছনের ঝাড় থেকে তরতজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিনীরা তৈরি করতেন হরেক রকম গৃহস্থালি জিনিষ পত্র। এগুলো বিক্রি হত চলনবিলের বিভিন্ন হাটবাজারে। এসব বিক্রি করে অনেকে পরিবার জীবিকানির্বাহ করত। দরিদ্র পরিবারের অনেক লোকের উপার্জনের একমাত্র পথও ছিল বেত শিল্প। ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তর পথে এ হস্ত শিল্পটি। এ শিল্পটি এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতে দৈবাৎ নজরে আসে। বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খালুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুকসেল্ফ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোতে পাওয়া যেত। মানুষ এখন এগুলো ক্রয় করে শখের বসে। কোন গৃহস্থালি কাজ কর্মের জন্য নয়। দিন দিন এই শিল্পটির আদর ও কদর দুটোই কমতে বসেছে। যেখানে তালপাতার হাতপাখারই কদর নেই, সেখনে এগুলো তো দূরের কথা। তৃণমুলে বিদ্যুৎ যেমন পাখার চাহিদা কমিয়েছে, তেমনি মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ ও বেত জাতীয় হস্ত শিল্পের কদর। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা। পরিষ্কারের নাম করে চলছে ঝোপ ঝাড় নিধন। চাহিদা না থাকার ফলে কৃষকরা কুমিয়ে দিয়েছে এগুলোর চাষবাস । একদিকে এই শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে ক্ষতিকারক প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন জাতীয় সামগ্রী নাগরিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। তাই বাঁশ এবং বেত শিল্পীরা বেকার ও কর্মহীন হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এভাবেই কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে চলনবিলের বাঁশ ও বেত শিল্প।